Image source;uttarbangasambad |
মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি: সরকারি নথিতে তিনি ছিলেন গর্ভবতী। আশাকর্মীরা নিয়মিত তাঁর বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিতেন এবং তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পেতেন। দুটি ইউএসজি রিপোর্টও দেখাচ্ছিল, তাঁর গর্ভে সন্তান ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল। কিন্তু অপারেশন টেবিলে গিয়ে সবকিছু বদলে গেল। নার্সিংহোমে সিজার করার সময় পেট কেটেও মিলল না সন্তানের কোনো চিহ্ন। এই অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়ি শহরের একটি নার্সিংহোমে। সন্তানের কোনো খোঁজ নেই, এবং এই ব্যাপারে কেউই কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না।
নকশালবাড়ির ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কুন্তল ঘোষও হতবাক। তিনি বলছেন, "আমাদের হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা ক্লিনিকে তাঁর নাম ছিল। এখন পেটের সন্তান কোথায় গেল, সেটি তদন্তের বিষয়। আমরা ওঁর বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তাঁরা সহযোগিতা করেননি।"
এখন সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম ও গাইনিকোলজিস্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পেটে সন্তান নেই শুনে ভেঙে পড়েছেন ওই মহিলা। সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন, তবে তাঁর স্বামী আর আইনি জটিলতায় জড়াতে চান না।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন ঘটনা কীভাবে সম্ভব, তা জানতে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে চাননি। "উত্তরবঙ্গ সংবাদ থেকে বলছি" শুনেই ফোন কেটে দিয়েছেন গাইনিকোলজিস্ট। এরপর যতবারই যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাহলে এই রহস্যের মূল কোথায়, সেই প্রশ্নই এখন উঠছে।
ঘটনায় আরও একটি নতুন মোড় রয়েছে। গর্ভে সন্তান না থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নকশালবাড়ি থানায় প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাদের প্যাডে তৈরি ইউএসজি রিপোর্ট ভুয়ো বলে দাবি করা হয়। রিপোর্টে রেডিওলজিস্ট হিসেবে ডাঃ প্রশান্ত সরদারের সই রয়েছে, তবে তিনি নিজেই থানায় আলাদা অভিযোগ করেছেন। ডাঃ সরদারের দাবি, ওই বেসরকারি সংস্থায় কাজ করলেও তিনি ওই নামে কোনো ইউএসজি রিপোর্ট তৈরি করেননি। তাঁর নাম ব্যবহার করে জাল স্বাক্ষর করা হয়েছে।
নকশালবাড়ির উত্তর কোটিয়াজোত এলাকার ওই তরুণী প্রথমবার মা হতে চলেছিলেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি যে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছিলেন, তিনি নকশালবাড়ির বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন। সেই চিকিৎসকের পরামর্শেই শিলিগুড়ির ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল তরুণীকে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে: যে ডাক্তার এতদিন ধরে রোগীকে দেখছিলেন এবং সন্তানের সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত করছিলেন, তিনি কেন এই ঘটনার পর কোনো ব্যাখ্যা দিলেন না? কেন তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ফোন বন্ধ রাখার চেষ্টা করলেন?
তরুণীর স্বামী এদিন বলেন, "আমার স্ত্রী নয় মাসের গর্ভবতী ছিল, কিন্তু পেটে কোনো বাচ্চা ছিল না।" এরপরই তিনি বলেন, "আমরা কোনো অভিযোগ করব না," এবং ফোন কেটে দেন। এত বড় ঘটনার পর তাঁরা কেন পুরো বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করছেন, সেটাও পরি ষ্কার হয়নি..আরো পড়ুন
0 মন্তব্যসমূহ